মোঃ নাজমুল হক
নিয়ামতপুর(নওগাঁ) প্রতিনিধি:
বাংলাদেশে চলছে এখন বর্ষাকাল। বর্ষায় বৃষ্টির ঝনঝন শব্দে গ্রামের টিনের চালাগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে। এ সময় খাল-বিল পানিতে ভরে যায়। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা খাল-বিলে মাছ ধরতে গিয়ে কতোই না হইচই করে। ছেলে-মেয়েদের সেই হইচই এখন নেই। বৃষ্টির পানির অভাবে যেখানে খাল-বিল শুকিয়ে ফেটে গেছে, কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণই করতে পারছে না মাঠে, সেখানে খাল-বিলে মাছ ধরা শুধুই কাল্পনিক। বৃষ্টির জন্য অনেকে বিভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করছেন। কেউ নামাজ আদায় করছে, কেউ আবার ব্যাঙ বিয়ের আয়োজন করছেন। ক্যালেন্ডারের পাতা বলছে আষাঢ় মাস শেষ হয়ে পার হতে চলল শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ। কিন্তু তেমন দেখা নেই বৃষ্টির। এই অবস্থায় বৃষ্টির আশায় গ্রাম বাংলার প্রাচীন রীতিপালন করে নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অভিনব ভাবে ব্যাঙের বিয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন।
২২ জুলাই শুক্রবার সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত রং মেখে নেচে গেয়ে চলে বিয়ের অনুষ্ঠান। ব্যাঙ বর ও কনের বিয়ে পড়ান স্থানীয় পুরোহিত শ্রী বৈশাখ পাহান।
আয়োজকেরা জানান, জনশ্রুতি রয়েছে ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হয়। আর সেই কারণে গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অভিনব ভাবে এই বিয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ক্যালেন্ডারের পাতা বলছে আষাঢ় মাস শেষ হয়ে পার হতে চলল শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহও। কিন্তু রোপা আমন ধান চাষ করার মত পর্যাপ্ত পানি জমিতে নেই, এবং অনাবৃষ্টির ও খরার কারণে কৃত্রিম ভাবে জমিতে পানি দিয়ে পানি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যে জমি গুলোতে চারা রোপণ করা হয়েছে, সে জমিগুলো পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। অনাবৃষ্টির হাত থেকে মুক্তি পেতে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়।
পুরোহিত বৈশাখ পাহান বলেন, ‘অনাবৃষ্টি ও খরা থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে শিশুরা এই ব্যাঙের বিয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা পরে উৎসবে রূপ নেয়। বড়রাও এ উৎসবে যোগ দেন। আমাদের বিশ্বাস এই ব্যাঙের বিয়ের মধ্য দিয়ে অনাবৃষ্টি ও খরা কেটে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা বৈশাখ পাহান বলেন, অতীতেও এভাবে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়ার পর জলের দেখা মিলে ছিল। এবারও সে আশা থেকেই এই আয়োজন করা হয়েছে। গতবার ব্যাঙের বিয়ের দিন দুপুর থেকেই বৃষ্টি হয়েছিল।’
এ বিষয়ে ব্যাঙ বরের মা প্রতিমা বলেন, অনেক বছর ধরে দেখে আসছি অনাবৃষ্টি হলেই এই গ্রামের সবাই মিলে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে। অনেক সময় বৃষ্টিও হয়েছে। তাই মানুষের কাছে এক প্রকার বিশ্বাস হয়ে গেছে, ব্যাঙের বিয়ে দিলেই বৃষ্টি হবে। সেই আশাতেই ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে ভগবানের কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করতেছি।
Leave a Reply