মোঃ নাজমুল হক
নিয়ামতপুর(নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
কাজ করেন অন্যের জমিতে দিন মজুর শ্রমিক হিসেবে। জমির কাজ না থাকলে যখন যে কাজ পায়, তা করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। বয়সের ভারে অসুস্থ স্ত্রী ও নাতনীসহ বিধবা মেয়েকে নিয়ে কিছুটা স্থীর হয়ে গেছেন এক বৃদ্ধ। গত শুক্রবার (২০ মে) রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে বাড়ির টিনের চালা উড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পরিবার নিয়ে। চালার অনেক টিন নষ্ট হয়ে গেছে। হাতে তেমন টাকা না থাকায় নষ্ট টিনগুলো মধ্যে কিছু টিন দিয়ে এবং বাজার থেকে পলিথিন কিনে পানি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন বৃদ্ধ লোকটি। বৃদ্ধ লোকটি হল সোলেমান আলী (৬৫)।
তিনি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের মৃত জাবিদ আলীর ছেলে।
সোলেমান আলী জানান, রাতে ঘরে শুয়েছিলাম। হঠাৎ করে ঝড় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ঘরের একচালার সব টিন উড়ে যাওয়ায় ঘরের মধ্যে পানি পড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে বৃষ্টির সময় অন্য ঘরে গিয়ে সবাই আশ্রয় নিয়ে একসাথে কোনো রকমে রাত পার করি। পরে সকালে উঠে উড়ে যাওয়া টিন সংগ্রহ করলেও বেশিরভাগ টিন দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ায় ব্যবহারের উপযোগী হয়ে না থাকায় বাজার থেকে পলিথিন কিনে চাল ঢাকার চেষ্টা করছি। আমার ২কাঠার উপর এই বাড়ি। এটা ছাড়া আমার আর কোনো সম্পদ নেই।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির চালের ওপর ওঠে পলিথিন এবং কিছু নষ্ট না হওয়া টিন দিয়ে ঝড়ে উড়ে যাওয়া চালা ঠিক করছিলেন তিনি এবং ছেলে মোমিন। পলিথিন দিয়ে চালা করলে তো আবার ঝড়ে ছিঁড়ে যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার হাতে তেমন টাকা নেই। কয়েকটা বাঁশ দরকার হলেও টাকার অভাবে ভাঙ্গা বাঁশ (চিকন) দিয়েই ঠিক করছি।
প্রতিবেশী আব্দুল মতিন বলেন, সোলেমান আলীর নিজের বাড়ি ছাড়া আর কোন জমিজমা নেই। মানুষের জমিতে কাজ করেই তিন মেয়ে ও এক ছেলের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার ছেলেটি বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা থাকে। দ্বিতীয় মেয়েটি এখন বাবার বাড়িতেই থাকে। ১২ বছর আগে দ্বিতীয় মেয়ে রেবেকার স্বামী ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে রাস্তায় দূর্ঘটনায় মারা যায়। সোলেমান আলীর কষ্টের জীবনে কালবৈশাখী ঝড় সব লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে সোলেমান আলী আবারও জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে জানান তিনি।
সোলেমান আলীর দ্বিতীয় মেয়ে রেবেকা (৩০) বলেন, আমার একমাত্র মেয়ে গর্ভে থাকতে স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। সেই থেকে আমি মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকি। আমার মেয়ে ৫ম শ্রেনী পড়লেও অভাবের সংসারে তাকে প্রাইভেট পড়াইতে পারি না। বাবার কষ্ট দেখে গ্রামের মোড়ে একটি ছোট দোকান করে যা আয় হয়, তা দিয়ে মেয়ের খরচ চালায়। ঘরের টিন উড়ে যাওয়ায় বাবা খুব অসহায় হয়ে পড়েছে। মাও দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে লাঠি ঢোকা দিয়ে চলেন। বাবা বৃদ্ধ বয়সে এসেও শ্রমিক হিসেবে মানুষের জমিতে কাজ করে আমার মায়ের কোনো রকমে ঔষধ কিনে ও পরিবারের ভার বহন করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খুব দ্রুতই তাদের খোঁজ খবর নেওয়া হবে।
এছাড়াও উপজেলার পাঁড়ইল ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবারের রাতের ঝড়ে বেশ কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলোর তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে।
Leave a Reply