মোঃ এনামুল হক স্টাফ রিপোর্টার।
নড়াইল জেলার লোহাগড়া নাম কেন হয়েছে তার কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এই লোহাগড়া নামকরণ সম্পর্কে আছে তা হলো,লোহাগড়া অঞ্চল রাজা সীতারামের রাজ্যের অংশ ছিল। এই লোহাগড়া নবগঙ্গা এবং মধুমতির ক্ষুদ্র শাখা বানকানা নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। এখানে রাজা সীতারাম রায়ের একটি সেনানিবাস ছিল। এখানে গোলাবারুদ ও আগ্নেয় অস্ত্র তৈরীর কারখানা বা কামার শালা ছিল। লোহার বিভিন্ন খন্ড মাটির মধ্যে যত্রতত্র গাড়া অর্থৎ পোঁতা অবস্থায় পাওয়া যেতো। পরবর্তীকালে কারখানার বিলুপ্তি ঘটলেও লোহার বিভিন্ন খন্ড মাটি মধ্যে পাওয়া যেত বলেই স্থানটি লোকমুখে ‘লোহাগড়া’ নামে অভিহিত হতে হতে কালক্রমে এই নামটি স্থায়ী হয়ে যায়। ১৯৯১ সালের বাংলাদেশ পপুলেশন সেনসাসের একপর্যায়ে উল্লেখ আছে,লোহাগড়া নামকরণের অন্য একটি উৎস হচ্ছে- লোহাগড়া উপজেলার সন্নিকটে কুমারকান্দা লোকালয়ে প্রাচীনকালে প্রচুর পরিমাণে লোহাগড়া নামে এক প্রকার বনফুল হতো। পাঠান আমলে মুসলিম প্রশাসকগণ এতদঞ্চলের জলদস্যুদের অত্যাচার দমনের জন্য এই কুমারকান্দা লোকালয়ের মধুমতি নবগঙ্গার সঙ্গম স্থলে একটি ঘাটি স্থাপন করেন। তাদের উদ্যোগে লোহাগড়া ফুলগাছের জঙ্গল পরিষ্কার করে লোহাগড়া জনবসতির গোড়াপত্তান হয় বলে লোকে একে লোহাগড়া নামে অভিহিত করতে থাকে।লোহাগড়ার নামকরণের তৃতীয় উৎসে বলা হয়েছে,লোহাগড়াতে প্রাচীনকালে প্রচুর পরিমাণে লৌহকারদের আবাস ছিল। প্রত্যাহিক জীবনের জন্য প্রয়োজন এমন নানা প্রকারের লোহার জিনিস তারা তৈরী করিত। এই জিনিসপত্র ক্রয়ের জন্য দূর দূরান্তের মানুষ এখানে এসে ভীড় জমাতো। তাদের নিকট বর্তমান লোহাগড়া নামক জনপদটি লোহাগড়া নামে পরিচিত লাভ করে।চতুর্থ উৎসে বলা হয়েছে,মুঘল আমলে শেষের দিকে ভূষনার রাজ্য সীতারাম এই লোহাগড়াতে সেনাবাহিনীর একটি শক্তিশালী ব্যুহ রচনার জন্য লোহার দ্বারা গড় নির্মাণ করেন। আর এজন্যেই পরবর্তীতে জনগণের মুখে এই লোকালয়টি লোহাগড়া নামে পরিচিত লাভ করে। সম্ভবত:এই সমস্ত কারণেই বর্তমানকালের এতদঞ্চলের জনগণের মুখে লোহাগড়া এবং লোহাগাড়া এই দুইটি উচ্চারিত হতে শুনা যায়। ১৮৬১ সালে নড়াইল মহাকুমা স্থাপনের সাথে সাথে লোহাগড়ায় একই বছর থানা স্থাপিত হয়।ভৌগোলিক অবস্থানঃ২৯০.৩৮ বর্গ কি: মি: আয়তন বিশিষ্ট লোহগড়া উপজেলা উত্তরে মোহাম্মদপুর উপজেলা,দক্ষিণে কালিয়া উপজেলা,পূর্বে আলফাডাঙ্গা, কাশিয়ানী ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে নড়াইল সদর উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত।নদ-নদীঃপ্রধান নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে নবগঙ্গা ও মধুমতি।শহরের আয়তন ও জনসংখ্যাঃ
একটি মৌজা নিয়ে লোহাগড়া শহর গঠিত।শহরের আয়তন ২.১০ বর্গ কিঃমিঃএর মোট জনসংখ্যা ৪০৩৭ এর মধ্যে পুরুষ ৫১.৬৫% ও মহিলা ৪৮.৩৫% প্রতি বর্গ কিঃমিঃ এ জনসংখ্যার ঘনত্ব ১৯২২ জন। শহরবাসীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৫০.০৬% প্রশাসনঃ১৯৮৩ সালে লোহাগড়া থানাকে উপজেলায় পরিণত করা হয়। ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১৫৪টি মৌজা এবং ২৩৩টি গ্রাম নিয়ে এই উপজেলাটি গঠিত।স্থাপত্য ঐতিহ্য এবং পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনঃগাজীর দরগা(নলদী) এবং রাধা গোবিন্দ মন্দির (জোড়বাংলা)মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনঃগণকবর ১টি (ইতনা)
জনসংখ্যাঃউপজেলার মোট জনসংখ্যা ২০৮২৪৮ এর মধ্যে পুরুষ ৫০.১৮%, মহিলা ৪৯.৯২%, মুসলমান ৪৮.৬৭%, হিন্দু-১৫.৩০% এবং অন্যান্য ০.০৩%ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানঃমসজিদ ৫২৫টি, মন্দির ১১০টি, সৌধ ৫টি এবং পবিত্রস্থান ৩টি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লোহাগড়া থানা জামে মসজিদ এবং লক্ষীপাশা কালিবাড়ী মন্দির।সাক্ষরতাঃগড় সাক্ষরতা ৩৮.২% এর মধ্যে পুরুষ ৪৪.৪% ও মহিলা ৩২%শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ
কলেজ ৫টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৩০টি, জুনিয়র হাইস্কুল ৪টি, মাদ্রাসা ৩৮টি, মক্তব ১৬০টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৮টি, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৩টি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে রয়েছে ইতনা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০), কুমড়ি তালবাড়িয়া হামিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬০)দিঘলিয়া মডেল হাই স্কুল(১৯৬৬) এবং লোহাগড়া, মডেল কলেজ (১৯৬৮) সংস্কৃতিক সংগঠনঃক্লাব ১৩৮টি, গণগ্রন্থাগার ৩টি,সিনেমা হল ২টি,মহিলা সংগঠন ৯০টি, থিয়েটার দল ৬টি, সাহিত্য সমিতি ২টি,অপেরাদল ৪টি এবং খেলার মাঠ ৩০টি।প্রধান পেশাঃকৃষি ৪৪.৩৬%, মৎস্য ১.৭৪%, কৃষি শ্রমিক ১৬.৪৮%, দিনমজুর ৩.০৪%, শিল্প ১.১৯%, পরিবহন ৩.৪২%, চাকুরী ১০.৬০%, ব্যবসা বাণিজ্য ১০.৮৪ এবং অন্যান্য ৮.৩৩%ব্যবহৃত জমির পরিমানঃমোট চাষযোগ্য জমি ২২৯২৫.৯৪ হেক্টর এবং অনাবাদী জমি ৬৩৪১.৫৬ হেক্টর। এর মধ্যে একক ফসল ২৭.১৪%, দ্বিফসল ৫৩.৭৪% এবং ত্রিফসল ১৯.৩৯% সেচের আওতায় জমি ১৪.৩০%ভূমি নিয়ন্ত্রণঃভূমিহীন চাষী ১২.৭৮%, ক্ষুদ্র চাষী ১২.৭৮%, মাঝারী চাষী ৬৯.৬৩% এবং ধনী চাষী ৪.৮১%প্রধান ফসলঃ
ধান,পাট,গম,সরিষা,বেগুন, পেঁয়াজ,রসুন,পান,সুপারী এবং পটল।বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত ফসলঃতিসি,তিল,বার্লি,কাউন, চীনা,এবং ছোলা।প্রধান ফলঃআম,কাঁঠাল,পেঁপে, নারিকেল,কলা,কালজাম,লিচু, লেবু, আমড়া এবং জামরুল।যোগাযোগ সুবিধাঃপাকা সড়ক ৫৬ কিঃমিঃআধাপাকা ১৮কিঃ মি: এবং কাঁচা রাস্তা ৫১৮ কিঃমিঃ পানি পথ ৮ নটিক্যাল মাইল।ঐতিহ্যগত পরিবহনঃ
পাল্কী,ঘোড়ার গাড়ী ও গরুর গাড়ী। এ ধরনের পরিবহন হয় বিলু্প্ত প্রায় বিলুপ্ত।শিল্প প্রতিষ্ঠানঃবিস্কুট ফ্যাক্টরী ৬টি, বলপেন ফ্যাক্টরী ১টি,করাত কল ১৫টি, বরফ কারখানা ৩টি, লেদ মেশিন ৬টি, ওয়েলডিং ২৮টি।কুটির শিল্পঃতাঁত শিল্প ২০,বাঁশের কাজ ৫০,কাঠের কাজ ১২৫,স্বর্ণকার ৬৫,কামার ৩৫,কুম্ভকার ৭৫ এবং দর্জি ২৪০,হাট বাজার ও মেলাঃ
হাট বাজারের মোট সংখ্যা ৪০টি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লোহাগড়া, বড়দিয়া,দিঘলিয়া এবং নলদী হাট।মেলা মোট ৫টি, তথ্য সংগ্রহকারী নড়াইল জেলা লোহাগড়া উপজেলা আরজেএফ সভাপতি মোঃ এনামুল হক,তবে এই লেখার ভিতর অতীত ও বর্তমান নিয়ে বিবর্তন হতে পারে।
Leave a Reply