মোঃ নাজমুল হক সেলিম- নিয়ামতপুর(নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর নিয়ামতপুরে পশু চিকিৎসায় মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কার্যক্রম। সরকারের সকল সেবা জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে দেয়া হয়েছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর। দীর্ঘ দিন থেকে সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার ছোট-বড় পশু খামারীরা। কেবল নাম দিয়েই চলছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতালের কার্যক্রম। সরকারি কার্যক্রমের আওতায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে সঠিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রতি মাসে দেয়া হয় হাজার হাজার টাকার সরকারী ঔষধ। সরকার ঔষধ দিলেও সেবা প্রত্যাশীদের মাঝে বিতরণের আগ্রহ কম থাকায় এবং লোকবল কম থাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। গরু-ছাগল সহ বিভিন্ন প্রাণীর চিকিৎসা নিতে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে এসে পাচ্ছেন না সঠিক সেবা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রানিসম্পদ দপ্তরে ১১টি পদ থাকলেও দীর্ঘ দিন থেকে নেই কোনো ভেটেরিনারি সার্জন। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে পশু চিকিৎসা বলে মন্তব্য করেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
নওগাঁর সর্ববৃহৎ উপজেলা হলেও প্রাণিসম্পদ সেক্টরের অবস্থা জরাজীর্ণ। এখানে সবসময় দেখা যায় পল্লী চিকিৎসকদের ভীড়। আর পল্লী চিকিৎসক দ্বারা দেয়া হচ্ছে হাতে গণা কিছু লোকজনকে সেবা ভেটেরিনারি সার্জন না থাকায় অসুস্থ পশু নিয়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে গেলেও সেবা না নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয় লোকজনকে। এভাবে প্রতি দিনই ব্যাহত হচ্ছে পশু চিকিৎসা সেবা।
উপজেলার ঝাড়ুয়াপাড়া গ্রামের সরকার শাহ আলম ও মায়ামারী গ্রামের আবুল কাশেমসহ বেশ কয়েকজন গরু খামারী মালিক বলেন, আমরা সরকারী কোনো ডাঃ দিয়ে গরুর চিকিৎসা করাতে পারিনা। গরুর কোন রোগ হলে স্থানীয় গ্রাম্য পশু চিকিৎককে দেখাতে হয়। কখনও ঔষধের প্রয়োজন হলে সাপ্লাই নেই বলে এড়িয়ে যান তারা। ফলে নিজের টাকা খরচ করে প্রয়োজনীয় ওষুধ ক্রয় করতে হয়।
সরকার শাহ আলম বলেন, আমার খামারে এখন পর্যন্ত কোন ডাক্তার পরিদর্শনে আসেন নি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতা ছাড়াই নিজ উদ্যোগেই চলছে আমার খামার।
প্রণোদনার কথা বললে গরু খামারী আবুল কাশেম বলেন, আমার খামারের বয়স অনেক দিন। এই করোনার সময়ে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে, তাছাড়া নিয়ামতপুর সোনালী ব্যাংকে এই খামারের উপর ঋণ নেওয়া আছে। আমি প্রণোদনার টাকা পাইনি।
এদিকে যে সকল বাড়িতে ৫টি বা ততোধিক গরু রয়েছে তাদেরকে একটি খামার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতোগুলো খামার থাকলেও সেগুলো দেখাভালোর জন্য কোনো সরকারী পশু চিকিৎসক নাই। গ্রামাঞ্চলের মানুষের আমিষের বেশির ভাগ চাহিদা পূরণ হয় গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী দিয়ে। এদিকে হাঁস-মুরগীর খামারীরাও পড়েছেন বিপাকে। খামারীদের দু একজন প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে খামার করলেও বেশির ভাগেরই নেই পশু-পাখির রোগ ব্যাধি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান। ফলে খামারের হাঁস-মুরগী মারা যাওয়ায় গুণতে হচ্ছে লোকসান। তাদের অভিযোগ, সরকারী প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যদি ভালো ভেটেরিনারি সার্জন থাকতো, তাহলে সেখান থেকে পশু-পাখির বিভিন্ন রোগ ব্যাধি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারতো।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নিয়ামতপুর উপজেলায় ছোট-বড়সহ মোট খামার আছে ৫৯৫টি। এ মধ্যে উপজেলায় গরুর খামার রয়েছে ২০০টি। নিবন্ধিত খামার ৭০টি অনিবন্ধিত খামার ১৩০টি। গরু মোটা তাজাকরণ খামার নিবন্ধিত ৩০টি অনিবন্ধিত ১৫০টি, ছাগলের খামার নিবন্ধিত ১০টি অনিবন্ধিত ১২০টি, ভেড়ার খামার নিবন্ধিত ০১টি অনিবন্ধিত ২১টি, বয়লার মুরগীর খামার নিবন্ধিত ১৫টি অনিবন্ধিত ১০টি, সোনালী মুরগীর খামার নিবন্ধিত ১০টি অনিবন্ধিত ১২টি, হাসের খামার নিবন্ধিত ০৪টি অনিবন্ধিত ১৪টি।
প্রাণি সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবীদ রতন কুমার কর্মকার বলেন, করোনাকালীন সময়ে খামারীদের ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দুই পর্বে ৪১৭ জন খামারীকে ক্যাটাগরী অনুযায়ী ১০ হাজার, ১৫ হাজার, ২০ হাজার করে প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ ইয়ামীন আলী বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই অনেক পদ শূণ্য রয়েছে। এ সকল পদে জনবল প্রাপ্তির জন্য ওপর মহলে অনেক বার বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত লোক না থাকায় সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। তবে এ সকল পদে জনবল পেলে আর কোনো সমস্যা থাকবেনা বলেও জানান তিনি। খামারীদের প্রণোদনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার অফিসের কর্মকর্তা দিয়ে প্রণোদনার তালিকা করে বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনার তালিকা তাঁর কাছে চাইলে, তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
Leave a Reply